ঢাকা, বুধবার ০১, মে ২০২৪ ১৯:৪৪:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মহান মে দিবসে মেহনতি মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা মদিনায় ভারি বৃষ্টিতে বন্যা, রেড অ্যালার্ট জারি দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ, পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা মহান মে দিবস আজ ক্যারিয়ার সেরা র‍্যাংকিংয়ে জ্যোতি চুয়াডাঙ্গায় আজ ৪৩.৭ ডিগ্রি, ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

একাত্তরের  ১৭ ডিসেম্বর ও একটি রেডিওর ইতিহাস

তপতী বসু | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৩ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর। সেই সময়ে যাঁরা তখনও বেঁচে ছিলেন, তাঁদের জীবন ছিল বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতন৷ আমাদের বাড়িতে বাইরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল শুধু একটি রেডিও। মা রেডিওটাকে বিছানা-বালিশের গোপন আঁধারে  লুকিয়ে রাখতেন। আশেপাশের পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের লুঠের নজর থেকে বাঁচাতে৷ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বা আকাশবানী তখন নিষিদ্ধ৷
রাত গহীন হলে আমার নয় বছরের ছোটো দাদা রেডিওটাকে কানের কাছে নিয়ে নব ঘোরাতো আর মাঝেমাঝে উঠে গিয়ে চুপিচুপি মায়ের কানের আরো কাছে গিয়ে জানাতো- ‘মা! যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যে কোনো সময় আমাদের এখানেও বিমান থেকে বোম ফেলতে পারে!’
আমাদের বাড়ির চারপাশটা মিলে তখন একটি পরিবারের মতন, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন—হিন্দু এবং মুসলমান৷ তাঁদের একজন ছিলেন ওয়াহিদ কাকা, মুর্শিদাবাদ ছিল যাঁর জন্মস্থান৷ এই কাকা তখন আমাদের পারিবারিক বন্ধু, প্রতিদিন দাদার কাছ থেকে খবর নিতেন গোপনে৷
আশেপাশের দুয়েকটি বাড়ির কয়েকটি কিশোর ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রাখল। তখনো যারা বেঁচে আছে- তাদের প্রাণ বাঁচানোর আশায়৷
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি একদিন৷ রেডিও শোনার একটি সময়ে দাদা এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে জানায়- ‘মা! দেশ স্বাধীন হয়েছে! এই দেশের নাম এখন থেকে বাংলাদেশ! আমি নিজে শুনেছি মা!’
দাদা গিয়ে খবরটা ওয়াহিদ কাকাকেও জানায়।তিনি সজল চোখে ছোটো ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরেন৷ যদিও আমাদের বাগেরহাট জেলা তখনও স্বাধীন হয়নি৷
জীবনের কিছু তারিখ স্মৃতিতে এমনই জড়িয়ে যায় যে তাকে ভুলে থাকা অসম্ভব! তেমনই আবেগ তাড়িত ‘১৭ ডিসেম্বর’৷ 
বিকাল তিনটার দিকে জনা-পঞ্চাশেক যোদ্ধা মানুষদের একটি দল আশ্চর্য শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসে আমাদের প্রাইমারী স্কুলটির দিকে...
‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ,বাংলাদেশ!
তোমার আমার ঠিকানা ,পদ্মা-মেঘনা-যমুনা!’...
সেই সব সাহসী বীর তরুণরা তখন সাধারণ মানুষের মনের অধিনায়ক!... তারা এগিয়ে আসতে থাকে আমাদের বাড়ির দিকে...। আর সামনে পিছনে বিপুল তরঙ্গের মতন বাড়তে থাকে উল্লসিত-আনন্দিত-আবেগতাড়িত মানুষ, যাঁদের অনেকেই তখন কাঁদছিলেন৷ তাঁরা হিন্দু বা মুসলিম নন, তাঁরা সর্বসাধারণ। 
যাঁরা সেদিন আমাদের হয়ে কাঁদছিলেন, তাঁদের অনেকে ছিলেন  মুক্তিযোদ্ধা। যাঁরা আমার ‘শহীদ বাবাকে’  চিনতেন- হয়তো অনেকে চিনতেন না৷
আরও অনেকে কাঁদছিলেন নয় মাস ধরে নিজেদের অপমানকে চোখের জলে স্নান করিয়ে শুদ্ধ হতে৷ মৃত্যুতো অনেকের পরিবারের দুঃখময় দুঃস্বপ্ন ছিল। কিন্তু  মানবিকতার যে অপমান সেদিন ‘পাকিস্তান এবং পাকিস্তানিরা করেছিল’,তার  প্রত্যক্ষ, সঠিক, সত্য, তথ্যবহুল প্রামানিক দলিল রাখা হয়নি।  
আর অবাক হয়ে সেদিন দেখেছিলাম, আমার মাকে চিৎকার করে কাঁদতে। জীবনে ঐ একদিন। বাবা আর ঠাকুমাকে হারিয়ে।
মায়ের পাশে বসে ছিলো আমাদের লাল বুলি। 
বাবার প্রিয় কুকুরটির চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছিলো অবিরল জলধারা......!